বাঙালি নারীদের মধ্যে সুফিয়া কামালকেই প্রথম রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। ২০ নভেম্বর তার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
কবি সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন। বরিশালের শায়েস্তাবাদে নানার বাড়িতে তার জন্ম হয়। তার বাবার বাড়ি কুমিল্লার শিলাউড়ায়।
বাবার নাম সৈয়দ আবদুল বারী ও মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন। সুফিয়া কামালের নানা ছিলেন সুফি সাধক। সেই সুফি থেকেই আসে সুফিয়া।
শিশু সুফিয়ার শৈশব কাটে শায়েস্তাবাদের জমিদার বাড়িতে। সেখানে মেয়েদের পড়াশোনার গুরত্ব ছিল না। চারিদিকে ছিল নিষেধের বেড়াজাল। বাংলায় কথা বলাও নিষেধ ছিল। বাড়ির ভেতর কথা চলত উর্দূতে। এটা ছিল খানদানি বনেদি পরিবারের নিয়ম।
মুসলিম পরিবারের মেয়েরা তখন বাইরে পা রাখতে পারত না। পড়াশোনা তো প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু সুফিয়া কামাল মা ও মামাতো ভাইদের উৎসাহে পড়ালেখা করতেন। বড় ভাই ওয়ালি এবং মামাতো ভা্ইদের নিয়ে ঘরের দেওয়ালকে ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে শুরু হয় স্কুল স্কুল খেলা। সাত বছর বয়স থেকেই তার বাংলা ও ইংরেজি চর্চা শুরু হয়। এরপর একটু বড় হলে তার মামার পাঠাগার থেকে কাউকে না জানিয়ে তিনি বই পড়তেন।
মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনকে বিয়ে করেন। তার স্বামী ছিলেন আধুনিক। তিনি সুফিয়াকে সাহিত্য পাঠে উৎসাহিত করতেন। স্বামীর উৎসাহেই তিনি বাংলা সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন।
১৯১৮ সালে মায়ের সাথে কলকাতা যান সুফিয়া কামাল। সেখানে সুফিয়া কামালের সাথে দেখা হয় বেগম রোকেয়ার। সুফিয়ার শিশু মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া।
১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাব্যগ্রন্থের প্রশংসা করেন।
কবি সুফিয়া কামাল সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনেও যোগ দেন তিনি। এছাড়া ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানেও অংশ নেন তিনি। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন এই পথিকৃৎ।
সাহিত্য অবদানের জন্য পান একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কার।
দেশ বিভাগের আগে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। আজীবন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলেন।