কয়েকদিন আগের কথা। তখনও আমাদের শীতের ছুটি চলছে। হঠাৎ করে স্কুল থেকে বাসায় ফোন আসল। আমার শ্রেণি শিক্ষাকর্মী উম্মে হাবীবা সুমি আপু ফোন করেছিলেন।
তিনি আমাকে ফোনে জানালেন যে, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নয় জানুয়ারি শনিবার সকাল দশটার মধ্যে স্কুলে উপস্থিত থাকতে হবে। ওই দিন স্কুলে নিউজিল্যান্ড থেকে একজন মিউজিশিয়ান আসবেন। তিনি তার বানানো বিভিন্ন সঙ্গীত উপাদান নিয়ে আমাদের সাথে কাজ করবেন।
শিক্ষাকর্মীর কথা অনুযায়ী আমরা দশম শ্রেণির মোট নয় জন শিক্ষার্থী সকাল দশটার মধ্যে স্কুলে উপস্থিত হয়ে যাই। অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণির প্রায় চল্লিশজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলাম।
আমরা পৌঁছার কিছুক্ষণ পরই মিউজিশিয়ান ও তার এক সহকর্মী এসে হাজির হন। মিউজিশিয়ান মাউরির বয়স চল্লিশের মতো হবে। মাউরিকে দেখে আমার যেমন আনন্দ হচ্ছিল। আবার হাসিও পাচ্ছিল তার ‘কেশবিন্যাস’ দেখে।
তার চুল দেখে আমার মনে হচ্ছিল যেন তার মাথার যতটুকু জায়গা জুড়ে চুল রয়েছে সেটা হলো একটা ব্রিজ এবং তার দুপাশ জুড়ে মেইন রাস্তা! হা হা হা!
এরপর মাউরি তার ঝোলা থেকে তার বানানো সঙ্গীত উপাদানগুলো বের করলেন। এগুলো তিনি প্রকৃতির বিভিন্ন প্রাণি ও উদ্ভিদ যেমন, তিমির দাঁত, গাছের গুড়ি, কুকুরের পায়ের হাড়, শামুক, লাউয়ের খোল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছেন। তার বানানো সঙ্গীত উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল, পুতাতারা (শঙ্খ), ছোট পুতাতারা (ছোট শঙ্খ), নুরু(তিমির দাঁত দিয়ে বানানো সঙ্গীত উপাদান),পু পু রানি (শামুক দিয়ে তৈরি), হুয়ে(লাউয়ের খোসা দিয়ে তৈরি) ইত্যাদি নানা উপাদান।
এরপর তিনি আমাদের সাথে তাদের দেশের নানা গল্প বলেন। তিনি আমাদের জানান যে, নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত নাচের নাম ‘হাকা।’ সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে জীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনা বলাই এ নাচের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি আমাদেরকেও এ নাচ শেখানোর চেষ্টা করেন। নাচটা করার সময় আমার খুব মজা লাগছিল! বন্ধুরা মিলে খুব হাসাহাসিও করছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমি এখন নিউজিল্যান্ডের পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ডের মানুষের সাথে নাচ করছি!
এর মধ্যে আমরা চিন্তা করলাম মিউজিশিয়ান মাউরিকে আমাদের একটা দেশাত্মকবোধক গান শুনিয়ে বিদায় জানাব।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা, এমন দেশটি কোথায় খুজেঁ পাবে নাকো তুমি।’’
গানটি শুনে মিউজিশিয়ান মাউরিকে খুব উৎসাহিত লাগছিল!
গান শেষে আমি মিউজিশিয়ান মাউরি এবং তার সহকর্মীর সাথে দেখা করি। আমি তাকে জানাই যে, তার বানানো সঙ্গীত সামগ্রীগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে। এটা বলতেই তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, কোনটা তোমার বেশি ভালো লেগেছে। আমি বললাম, ‘সবগুলোই।’
বিদায়ের সময় তাকে বললাম পরের বার যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন যেন অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করেন। জবাবে তিনি হেসে দেন এবং আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলেন ‘গুডবাই।’
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় কেন জানি মাউরি আর উমাকোর কথা আমার খুব মনে পড়ছিল। এরপর একা একা চিন্তা করলাম এটাই হয়তো ‘এক দেশের মানুষের সাথে আরেক দেশের মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক।’