দেড় বছর বয়সে আমি নালন্দায় পা দিই। নালন্দায় আমি অঙ্কুরে (প্লে) ভর্তি হই। এখন আমি দশম শ্রেণিতে। স্কুল ছেড়ে, বন্ধুদের ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আমার।
এ কথা চিন্তা করলেই মনের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে! এটা আমাদের স্কুলের শেষ বছর, তাই এ বছরের শুরুতেই বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করেছিলাম যে, এই বছর পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা বেশির ভাগ সময় একসাথে কাটাব, আড্ডা দেব, ঘুরে বেড়াব। আমরা পরিকল্পনা মতো ঘুরছি, বন্ধুদের বাড়ি যাচ্ছি।
কয়েকদিন আগের কথা। আমরা তের জন বন্ধু মিলে স্কুল থেকে বাসে করে বেলা আড়াইটায় রওনা হই আরেক বন্ধু তুহুর বাসার উদ্দেশ্যে। তুহুর বাসা পরিবাগে। তুহুর বাসায় আমরা বেলা সাড়ে তিনটায় গিয়ে পৌঁছাই।
ওর বাসায় যেতে যেতেই আমাদের খুবই ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন, পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে!
তুহুর মা আন্টি মনে হয় আমাদের সবার পেটের অবস্থাটা বুঝতে পারলেন। তিনি ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘‘আগে হাত মুখ ধুয়ে নাও, আমি তোমাদের খাবার দিচ্ছি, তোমাদের নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা লেগেছে।’’
তিনি আমাদের জন্য মুরগি, পোলাউ,গরুর মাংস আর চিংড়ি মাছ রান্না করেছিলেন। সেদিন তুহুদের বাসায় সবাই এত খেয়েছিলাম যে নড়তে পারছিলাম না।
ওই দিন ছিল তুহুর জন্মদিন। আমরা তের জন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম যে, জন্মদিনে ওকে একটা সারপ্রাইজ দেব। ওই দিন আমরা তুহুর বাসায় একটা কেক আনি। কিন্তু এই কেকের খবরটা ও জানত না।
তুহুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য, আমরা তুহুকে একটা রুমে আটকে রাখি। আর আমরা সবাই তুহুর রুমের লাইট বন্ধ করে,পর্দা টেনে রুমটাকে অন্ধকার করে ফেলি। এরপর আমরা একেক জন একটা করে মোট তেরটি মোমবাতি জালাই। আর আরেকজন তুহুর জন্য আনা কেকটা ধরে ছিল। একজনকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে দিলাম। যাতে তুহু এদিকে আসলেই দরজায় টোকা দেয়।
কিছুক্ষণ পর দরজায় আওয়াজ হলো। দরজায় আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে আমরা সবাই মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিলাম, আর সবাই মিলে একসাথে গাইতে শুরু করলাম, ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে তুহু।’’
কেক কাটার পর্ব শেষ হওয়ার পর, আমরা সবাই মিলে তুহুর বাসার ছাদে যাই। তুহুর বাসার ছাদটা অনেক বড়। ওই দিনের আবহাওয়াটা ছিল অসাধারণ! আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হলো, আকাশও আমাদের সাথে আনন্দে মেতে উঠেছে! একটু পরেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা সবাই মিলে এই বৃষ্টির মধ্যে ছাদে আড্ডা দিলাম। বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল টেরই পেলাম না।
এই দিনটার কথা সারাজীবন মনে থাকবে। এর পরের বছর হয়তো আমরা একেক জন একেক জায়গায় চলে যাব কিন্তু এই মুহূর্তগুলো অম্লান হয়ে থাকবে।