সমাজের সকলকে হিজড়া শিশুদের শ্রদ্ধা করতে তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা ও শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।
হ্যালোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হিজড়া শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে রাজধানীর এক হোটেলে হ্যালোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিজড়া শিশু প্রসঙ্গে তিনি জানান, এসব শিশুর অধিকারের জন্য সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
মানসিকতাকে দোষ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত এটি আমাদের মানসিকতার বিষয়। হিজড়া শিশুরা শোষিত হচ্ছে। হিজড়াদের মানুষ হিসেবে সমাজ মর্যাদা দিচ্ছে না’
এটাকে গুরুতর একটি সমস্যা মনে করছেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা যেন এসব শিশুর শারীরিক দায় তাদের ঘাড়েই চাপিয়ে না দেন-সে কথাও উল্লেখ করেন।
‘প্রথমত এটা তাদের দোষ নয়। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। এটা যে কোনো মানুষেরই হতে পারে। তাই তাদের হীন মনে না করে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন না করেই শ্রদ্ধা করতে হবে।
‘এ ব্যাপারে সামাজিক যে ট্যাবু রয়েছে সেটা দূর করতে হবে। তার জন্য প্রথমেই দরকার তাদের জন্য শ্রদ্ধাবোধ ও স্বাভাবিক আচরণ। স্বাভাবিক জীবনযাপনে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
‘পরিবারের এটা বোঝা উচিত, কোনো শিশুই জন্মের জন্য দায়ী নয়। জন্মগত কোনো ত্রুটি, শিশুর দোষ নয়। তাই তাকে অশ্রদ্ধা করা উচিৎ নয়’, বলেন তিনি।
এছাড়া উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িকতা নিয়েও তিনি কথা বলেন। শিশুদের মনে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূল্যবোধ। আমাদের মধ্যে কি ধরণের মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। একটি মানবিক মূল্যবোধ ও আরেকটি হলো বৈশ্বিক মূল্যবোধ।’
‘মানবিক মূল্যবোধ আমাদের একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে আর বৈশ্বিক মূল্যবোধ আমাদের অপরের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। তাই শিক্ষার মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা বাবা-মায়েরও দায়িত্ব।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে সবধরনের ভেদাভেদের দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৈলাস। তরুণ ও শিশুদের কাছে বড়দের হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বা গড আমাদের এক জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ বা গড নন, শিশু বা তরুণরাও নন, যারা ধর্ম বিভেদ তৈরি করেছেন, সীমানা বা পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি করেছেন, এগুলো সব আমার মতো বড়দের করা। তাই আমি বড়দের হয়ে তোমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
‘আমার মতো বড়রা তোমাদের ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দিয়েছে্ন। তোমার পরিচয় মুসলিম বা হিন্দু, বাংলাদেশি বা ভারতীয়, এটা আমাদের মতো বড়দের করা। এখন এটা এক করে দেওয়ার পালা তোমাদের হাতে।’
তরুণদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকে ‘একটি বিশ্ব’ হিসেবে আর মানবজাতিকে ‘একটি মানবজাতি’ হিসেবে গড়ে তোলো।’