বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘মিথ্যা সব পাপের জননী।আমার মনে হয় একবার মিথ্যা বলা শুরু হলে, কোনো ব্যক্তিই আর কোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না।

ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাবা-মা আমাদের মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। আমরাও বাবা-মার কথা মতোই ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শুরু করি যে মিথ্যা বলাটা একটা খারাপ কাজ। কিন্তু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, কারণে বা অকারণে অনেক সময়ই বাবা-মা শিশুদের সামনে মিথ্যা বলে ফেলেন, যা শিশুদের উপর খুব বেশি মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

কয়েকটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা বলা যায়। একটি শিশু যখন তার মা বাইরে যাওয়ার সময় কান্না শুরু করে, তখন শিশুটির মা বলে আমি কোথাও যাচ্ছি না, এখানেই আছে। অথচ কিছুক্ষণ পরেই যখন শিশুটি দেখে তার মা তাকে ফেলে বাইরে গেছেন, তখন তার মধ্যেও মিথ্যা বলার একটা প্রবণতা তৈরি হয়।

সে ভাবতে পারে মা যখন আমাকে মিথ্যা বলতে পারে, তাহলে মিথ্যা বলাটা হয়তো খারাপ কোনো কাজ না। দ্বিতীয়ত, মায়েরা প্রায়ই যখন শিশু খেতে চায় না তখন শিশুকে বলে থাকেন, ‘এক চামচ মুখে দাও, তারপর আমরা বাইরে রিকশা দিয়ে ঘুরতে যাব।’ এই কথা শোনার পর ঘুরতে যাওয়ার লোভে তার খাবার শেষ করে। অথচ এরপর যখন সে দেখে যে তার মা ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন না, তখন তার মনে হতে পারে মা আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে। ঠিক এভাবেই মা’র মতো দেখা যায় যে শিশুও মিথ্যা বলা ধীরে ধীরে শিখে গেছে।

যেসব ঘরে ছোট শিশু আছে, তাদের ঘরে এই বিষয়গুলো নিত্যদিনের ব্যাপার। অথচ অনেক অভিভাবক বুঝতেও পারছেন না যে, তারা মনের অজান্তেই শিশুকে মিথ্যা কথা দ্বারা প্রভাবিত করছেন, তাদের কথাগুলো অনুসরণ করে, দেখে শিশু মিথ্যা কথা শিখছে। এর ফলে শুধুমাত্র যে শিশুর ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। এর ফলে শিশুদের সাথে বাবা-মা’র সম্পর্কের জায়গাটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শিশুকে মিথ্যা বলাটা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। মিথ্যা বলে হয়তো আপনি তাৎক্ষণিক শিশুকে সামলাতে পারবেন, তবে পরবর্তীতে এর রেশ ভয়াবহ। তাই শিশুকে উচিত সব বিষয়ে বুঝিয়ে বলা, সে যা কিছু জানতে চায়, তার যথাযথ উত্তর দেওয়া। এতে বাবা-মা ও শিশু উভয়ের সম্পর্কের জায়গাটা আরো সমৃদ্ধ হবে।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে হ্যালোডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ০৬ নভেম্বর ২০১৮