অন্য সকলের মতো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, পড়ার ফাঁকে সময় পেলে টিভি দেখাটা আমার অভ্যাস।

কয়েকদিন ধরে খবরের কাগজ বা টিভির পর্দা খুলতেই যেই শব্দটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, তা হলো ‘যৌন নিপীড়ন।’

আমরা নাকি উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছি? তাহলে আমাদের স্বভাব, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি কেন উন্নত হচ্ছে না? তাহলে কী ব্যাপারটা এমন যে শুধু নামে মাত্র উন্নত হচ্ছি, কিন্তু সভ্য হচ্ছি না? তাহলে এই উন্নয়নের কী মানে?

আজকাল মার সাথে বাজারে গেলে দেখতে পাই এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে, যারা কিনা বাজারে আসেন অন্যদের ধাক্কা দিতে, মেয়েদের গা ঘেঁষে দাঁড়াতে। কয়েকদিন আগের কথা।

মার সাথে বাজারে গিয়েছি। হঠাৎ দেখি একটা ছোট মেয়ে সেও তার মার সাথে বাজার করতে এসেছে। বাচ্চাটা কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে দেখে আমি ওকে লক্ষ্য করছিলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম একটা বয়স্ক লোক মেয়েটিকে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়েই চলেছে। মেয়েটির মা বাজারের দোকানদারের সাথে কথকোপথনে ব্যস্ত থাকায় মেয়েটির দিকে খেয়াল রাখতে পারছিলেন না। ছোট্ট মেয়েটাকে দেখে বুঝতে পারছিলাম যে, সে খুব অসস্তিবোধ করছে, কিন্তু মাকে বলতে পারছে না।

বয়স্ক লোকটার এমন আচরণ দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার দাদার সমান মানুষটা এই ধরনের কাজ করতে পারে!

আমাদের সবার একটা ভুল ধারণা আছে। সেটি হলো- আমরা মনে করে থাকি যে, শুধু মেয়েরা বড় হলেই যৌন হয়রানির শিকার হয়। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। বড়দের তুলনায় শিশুরা অধিক পরিমাণে ‘যৌন হয়রানির’ শিকার হয়। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তারা অনেকেই সেটি বুঝে উঠতে পারে না। অনেকে আবার বুঝে উঠলেও, বাবা-মাকে বলতে লজ্জাবোধ করে!

এই স্বভাবের লোক যে কেবল বাজারে রয়েছে, তা কিন্তু ভুল। বাজারে, বাসে, রাস্তায়, স্কুলে, এমনকী ঘরেও আমরা এমন নির্যাতনের শিকার হতে পারি।

স্কুল থেকে আগে যখন বাসে যাতায়াত করতাম তখন  এরকম ঘটনাগুলো প্রতক্ষ্যভাবে দেখেছি।

শিশুরা কী বাসায় সুরক্ষিত? শিশুরা কাদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়? বেশিরভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীদের দ্বারা। ‘আসো বাবা, তোমাকে একটু আদর করি’ এই কথাটার দ্বারাই একটা শিশু, নির্দিষ্ট বয়সের পর অস্বস্তিবোধ করে। কিন্তু এই অস্বস্তির কথা হাতে গোনা কয়েকজন শিশু মুখ ফুটে বলছে। কিন্তু বাকী শিশুগুলো? বাকী শিশুগুলো ভয়ে এই কথাগুলো তাদের বাবা-মাকে জানাতে পারে না। আর জানলেও অভিভাবকেরা লোকলজ্জায় সেগুলো চেপে রাখে!

বেশিরভাগ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তাদের আত্মীয় স্বজন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের দ্বারা, শিশুরা কোন বাসায় কাজ করলে, সেই বাসার মালিকের দ্বারা, স্কুল পড়ুয়া শিশুরা তাদের শিক্ষকদের দ্বারা (মাদ্রাসাসহ)কিংবা বাসায় গৃহশিক্ষক দ্বারা।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে বিগত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৩৮ জন শিশু৷ নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ৭৪ জন শিশু৷ যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করতে গিয়ে যৌন হয়রানিকারীদের মারধরের শিকার হয়েছে ১৮ জন শিশু৷ আর পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ১২ জন শিশু৷

বর্তমানে যৌন নিপীড়ন একটি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। এর পেছনের মূল কারণ হলো আমাদের অসতর্কতা। যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে সবার আগে সচেতন হতে হবে বাবা-মাকে। ‘ এগুলো আমার ‍শিশুর সাথে কখনো হবে না,’ এটা বলে এই বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করা যাবে না।

প্রত্যেক বাবা-মার উচিত শিশুর সাথে যৌন নিপীড়ন সম্বন্ধে সরাসরি কথা বলা। যাতে করে তারা সহজেই অভিভাবকের সাথে বলতে পারে।

বর্তমানে এই সমস্যার জন্য অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বাবা-মা ও বড়দের সহযোগিতার মাধ্যমেই একমাত্র শিশুরা এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবে।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে হ্যালোডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৫ মে ২০১৯