সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন, সোমবার  বরিশালের শায়েস্তাবাদে নানার বাড়িতে। সেদিন ছিল জমিদার বাড়ির পুণ্যাহর দিন। শুভ দিন।

তার বাবা বাড়ি কুমিল্লার শিলাউড়ায়। বাবার নাম সৈয়দ আবদুল বারী ও মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন।

এক বইয়ে পড়েছিলাম সুফিয়া কামালের নানা ছিলেন সুফি সাধক। সেই সুফি থেকেই আসে সুফিয়া।

শায়েস্তাবাদের জমিদার বাড়িতে মেয়েদের পড়াশোনার গুরুত্ব ছিল না। চারদিকে ছিল শুধু নিষেধের বেড়াজাল। বাংলায় কথা বলাও নিষেধ ছিল। বাড়ির ভেতর কথা চলত উর্দুতে। এটা ছিল খানদানি বনেদি পরিবারের নিয়ম।

মুসলমান পরিবারের মেয়েরা তখন বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারতেন না। পড়াশোনার তো প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু সুফিয়া মা ও মামাতো ভাইদের উৎসাহে পড়ালেখা করেন। বড় ভাই ওয়ালি আর মামাতো ভাইদের নিয়ে ঘরের দেয়ালকে ব্লাকবোর্ড বানিয়ে শুরু হয় স্কুল স্কুল খেলা। সাত বছর বয়স থেকেই তার বাংলা ও ইংরেজির চর্চা শুরু হয়। এরপর একটু বড় হলে মামার পাঠাগার থেকে কাউকে না জানিয়ে তিনি বই নিয়ে পড়তেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাত ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী ছিলেন আধুনিক মনস্ক। তিনি সুফিয়া কামালকে সাহিত্য পাঠে উৎসাহিত করতেন। স্বামীর উৎসাহেই বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন।

১৯১৮ সালে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় যান সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম রোকেয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়৷ সুফিয়া কামালের শিশু মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া।

১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। এ বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাব্যগ্রন্থ পড়ে প্রশংসা করেন।

সাহিত্যে অবদানের জন্য পান একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কার।

কবি সুফিয়া কামাল সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনেও যোগ দেন তিনি। এছাড়া ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানেও অংশ নেন তিনি। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন এই পথিকৃৎ।

এর আগে দেশ বিভাগের আগে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। আজীবন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মারা যান।