আমাদের প্রত্যেকের একটা করে শখ বা ইচ্ছে থাকে। একেক জনের শখ বা ইচ্ছে একেক রকম। আমারও ছোটবেলা থেকে শখ ছিল ছবি আঁকার।
ছোটবেলায় আমি ছবি আকঁতে খুব পছন্দ করতাম। এখনও করি।
আমার স্কুলে ছোটবেলায় ‘আঁকা-গড়া’ নামে একটা বিষয় ছিল। এই বিষয়টা আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। এর কারণটা ছিল ছবির আঁকার প্রতি আমার ভালোবাসা।
ছোটবেলায় ইচ্ছে মতো রঙ দিয়ে ছবি আঁকতাম আমি। এরপর আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে, এই বিষয়ের নাম হয় ‘চারু ও কারু কলা।’ তখন বিষয়টিতে যোগ হয় বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের জীবনী। ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি বিষয়টির ওপর।
‘চারু ও কারুকলা ক্লাসে’ বসে বসে ভাবতাম আমি হয়তো শুধু পরীক্ষার জন্য বিষয়টি পড়ছি। আঁকার জন্য ভালোবাসা থেকে নয়।
সেই সময়ই আমার আরেকটা শখ ছিল গল্পের বই পড়া। গল্প শুনতেও খুব পছন্দ করতাম। তাই ছোটবেলায় যখন আমাকে কেউ গল্প শোনাত, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম।
আমার স্কুল অন্য স্কুল থেকে একটু আলাদা। এখানে শিক্ষকরা ছোট শ্রেণির শিশুদের গান গেয়ে বা গল্প শুনিয়ে ক্লাস শুরু করেন। আমার সেই বয়সে শিক্ষকরা যখন ক্লাসের শুরুতে গল্প শোনাতেন, মনোযোগ দিয়ে শুনতাম।
এখন আমার বাংলা পাঠ্যবইয়ে নানান গল্প, কবিতা ও ছড়া রয়েছে। বাংলা ক্লাসে এখনও শিক্ষক গল্প বলেন কিন্তু এর সাথে ছোটবেলার গল্পের অনেক পার্থক্য রয়েছে! সেই গল্প শুনতে খুব ভালো লাগত, খু্ব আগ্রহের সাথে শিক্ষকের গল্প শুনতাম। এখন আর ভালো লাগে না। কারণ এখন যে গল্প হয় সেটা শিক্ষক নিজের মতো করে বলেন, আমাদের ভালো লাগার জন্য নয়। এখন যে গল্প শিক্ষক শোনান, তা পাঠ্যপুস্তকের গল্প। সেটা শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর বা ভালো ফলের জন্য।
ছোট থেকেই আমি ‘মুখস্থ’ জিনিসটা পছন্দ করি না। যে কোনো সৃজনশীল কাজ করতে খুব ভালো লাগে আমার। তাই যখন পড়াশোনার মধ্যে কোনো সৃজনশীল বিষয় থাকে সেটা পড়তে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়। তাই ছোট থেকেই বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য আমার প্রিয় দুটি বিষয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমার পাঠ্যপুস্তক পড়তে ভালো লাগে না। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের দুটি বিষয় আমার খুব ভালো লাগে। সেগুলো হলো-বাংলা ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র। কারণ এ দুটি বিষয়ের মধ্যে আমি নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারি।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন করে একটা জিনিস যুক্ত হয়েছে। সেটা হলো ‘সৃজনশীল প্রশ্ন।’ তবে আমি নিজে এ প্রশ্নের নাম কেন ‘সৃজনশীল প্রশ্ন’ করা হয়েছে তা বুঝতে পারি না। কারণ এতে শিশুর কোন সৃজনশীলতা প্রকাশ পায় না। বরং আমার মনে হয় শিশুকে এটা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক শিশুকে পাঠ্যবই আরও ভালো করে এবং ‘সৃজনশীল প্রশ্নের’ ব্যাপারটি মাথায় রেখে পড়তে হয়। ফলে শিশু পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
পাঠ্যবই পড়তে আমার ভালো না লাগার অন্যতম কারণ হলো ‘পরীক্ষা।’ যখনই পাঠ্যবই হাতে নিই, তখনই মনে পড়ে এই বইটা পড়ে আমার একটা ভালো ফল করতে হবে। শুধু আমি নই, অধিকাংশ শিশুই নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে না। তাহলে আসলে কী হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়? আমরা কী কোনদিনই পারবো না নিজ সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে? নাকি সারা জীবনই আমাদের পাঠ্যবই মুখস্থ করে যেতে হবে?