পৃথিবীর নানা স্থাপনা অবাক করে দেয় আমাদের। ছড়ায় মুগ্ধতা। এমন আশ্চর্যজনক কয়েকটি স্থাপনা হলো পিরামিড, আইফেল টাওয়ার, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান।
মিশরের নাম উঠলেই সবার আগে চলে আসে পিরামিডের কথা। পিরামিডকে ঘিরে বোনা আছে অনেক রহস্যের জাল।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের কথা। মিশরীয়দের মাঝে একটি প্রথা প্রচলিত ছিল। মৃত মানুষকে সমাধিস্থ করার সময় মৃতদেহের সাথে স্বর্ণসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী দেওয়া হতো। এমনকি সাহায্যকারী ও পোষা প্রাণীও। এজন্য সমাধির ওপর ইট বা পাথর দিয়ে গড়ে তোলা হতো সৌধ। অধিকাংশ পিরামিড তৈরি হয়েছে এভাবেই।
মিশরে প্রচুর পিরামিড রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন গিজার পিরামিড। খুফুর পিরামিড নামেও এটি পরিচিত। এটি পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি। সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র এটিই এখনো টিকে রয়েছে। বাকিগুলো ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গিয়েছে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্রতীক হয়ে আছে আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার হলো একটি সুউচ্চ লৌহ কাঠামো। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ৩০০মিটার (৯৮৬ফুট)। গুস্তাভো আইফেল এ টাওয়ার নির্মাণ করেন। তিনি রেলের জন্য সেতুর নকশা করতেন। টাওয়ারটি নির্মাণেও তিনি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন।
তার নাম অনুসারে কাঠামোটির নাম রাখা হয় ‘আইফেল টাওয়ার।’ ১৮,০৮৩টি লোহার বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট কাঠামো জোড়া লাগিয়ে এ টাওয়ার নির্মাণ করতে ৩০০জন কর্মীর প্রয়োজন হয়েছিল।
১৯৩০ সালে নিউইয়র্কে ‘ক্রাইসলার বিল্ডিং’এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আইফেল টাওয়ারই ছিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা। এ নির্মাণ কাজটি স্থাপত্যশিল্পের জন্য এক বিপ্লবের সূচনা করেছিল।
নিউইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ডের হাডসন নদীর মুখে যেখানে জাহাজ নোঙর ফেলে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল মূর্তি। যেন স্বাগতম জানাচ্ছে সবাইকে। এর নাম হলো স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ৩০৫ ফুট উঁচু এ মূর্তি ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে দেশটির শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ফ্রান্স উপহার হিসেবে দেয়।
অসংখ্য পর্যটক আসেন এখানে। বেদী থেকে মশাল পর্যন্ত স্ট্যাচু অব লিবার্টির উচ্চতা ১৫১ ফুট এক ইঞ্চি (৪৬ মিটার)। আর ভূমি থেকে মশাল পর্যন্ত উচ্চতা ৩০৫ ফুট এক ইঞ্চি (৯৩ মিটার)। মূর্তির পায়ের গোড়ালি থেকে মাথা পর্যন্ত ১১১ ফুট উঁচু।
ফ্রেঞ্চ ভাস্কর অগাস্টাস বার্থোলডি এই স্ট্যাচু অব লিবার্টির নকশা করেন। এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো নকশা করেন গুস্তাভ আইফেল।
এর মধ্যে লুকিয়ে আছে স্বাধীনতা, শক্তি ও সাহসের গল্প, বিপুল ঐশ্বর্য্যরে গল্প, বন্ধুত্ব ও ঐক্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়ার গল্প। লুকিয়ে আছে মমতা আর বিশালতার গল্প। প্রতি বছর ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ এখানে ভ্রমণে আসেন।
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের আর একটি হলো ব্যাবলিনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান। ধারণা করা হয় একটি বড় উঁচু ভিত গড়ে এর উপর এ বাগান তৈরি করা হয়। এ জন্য একে ঝুলন্ত বাগানও বলা হয়। বাগানটির গাছের ডালপালা বা ফুল ওপর থেকে ঝুলতে থাকে।
ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে ব্যাবিলন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয়, এখানেই খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয় এই বিস্ময়কর বাগানটি। কেউ মনে করেন সম্রাট নেবুচাদনেজার তার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য এই বাগান নির্মাণ করেছিলেন। আবার অনেকের ধারণা এটি গ্রীক রাণী সেমিরামিসের তৈরি। এর অস্তিত্ব ও নির্মাণ নিয়ে যেন প্রশ্নের অন্ত নেই।