আদিবাসী-’ এই শব্দটির সাথে আমরা খুব পরিচিত। কিন্তু পরিচিত হলে কী হবে? এই মানুষগুলোর সম্পর্কে আমরা কখনো কী একটু জানতে চেষ্টা করি? ভাবতে চেষ্টা করি? না, করি না। এর কারণটা হলো আমাদের চোখে তারা সবসময়ই একটি পিছিয়ে পড়া জাতি।

কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো আপনার বন্ধু যদি একজন আদিবাসী হতো তাহলে কী তাকে কেবল মাত্র তার জাতিগত পরিচয়ের কারণে পেছনে ঠেলে দিতে পারতেন? আলাদাভাবে গণ্য করতে পারতেন? ছোট করে দেখতে পারতেন? একটু হলেও কী তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করতেন না?

আমাদের এই বাংলাদেশে ৩০টি ভাষার মোট ৪৫টি জাতিসত্তার মানুষ বাস করে, যাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামেই রয়েছে ১০টি ভাষাভাষীর ১৩টি জাতিসত্তার মানুষ। ভাষা, ভূখণ্ডের ভৌগলিক গঠন, ধর্ম, লোকাচার, আর্থ-সামাজিক অবস্থা অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

প্রত্যেক মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে শিক্ষা গ্রহণের অধিকার। আর এই শিক্ষার মূলে রয়েছে ভাষা। মানুষ তার নিজ মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে বা বোঝাতে যতটা সক্ষম, তা অন্য ভাষায় সম্ভব না। অথচ, আদিবাসী শিশুদের প্রতিনিয়তিই শিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে বাংলা ভাষায়, যা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা নয়। একারণে তাদেরকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের বই মাতৃভাষায় বই দেওয়া হয়েছে অনেক জায়গায়। তবে শিক্ষক সংকটসহ নানা কারণে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।

শিক্ষার অধিকার স্বীকৃত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থা ৫ জুন ৪০তম অধিবেশনে ১০৭ নম্বর কনভেনশনে আদিবাসী ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করে। এখানে বলা হয় যে, সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের তাদের মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ করে দিতে হবে। কিংবা যেখানে এটি সম্ভব নয়, সেখানে তাদের সমগোএীয়দের মধ্যে সাধারণভাবে বহুল পরিচিত ভাষার শিক্ষা দান করতে হবে।

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার প্রয়োজন। এরফলেই হয়তো একজন আদিবাসী শিশু পারবে তার নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে বেড়ে উঠতে ও একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে হ্যালোডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮