নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আল দীনের ৬৫ তম জন্মদিন ১৮ অগাস্ট।

সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ অগাস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে জন্ম নেন৷ মফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি৷

বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি নাটকের গঠন ও ভাষার উপর গবেষণা করেছেন। ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের বিষয় ও গঠন তিনি নিজের নাট্কে ব্যবহার করেন। আর বাংলা নাটককে করে তুলেন বৈশিষ্টপূর্ণ।

বাবার চাকুরির জন্য তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে৷

তিনি ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন৷

১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করোটিয়ার সাদত কলেজে৷ সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি শেষ করেন।

তিনি ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬৮ সালে কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকায় আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের নিয়ে লেখা তার বাংলা প্রবন্ধ ‘নিগ্রো’ ছাপা হওয়ার পর লেখক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে কপি রাইটার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করলেও পরে বাকী জীবন শিক্ষকতাই করেছেন৷ ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার।

তিনি গানকে বলতেন কথাসুর৷ ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ছোট্ট একটা গানের দল৷ নাম দিয়েছিলেন, ‘কহনকথা’৷

তিনি বিশ্বাস করতেন পরের অনুকরণ করে কখনও নিজস্বতা অর্জন করা যায় না৷

তিনি সবসময় বলতেন,”অন্যের বসন কখনও নিজের হয় না৷ হয় না সেটা নিজের ভূষণ।”

তার প্রথম রেডিও নাটক ‘বিপরীত তমসায়’  ১৯৬৯ সালে এবং টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ঘুম নেই) প্রচারিত হয় ১৯৭০ সালে। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্য বিষয়ক কোষগ্রন্থ বাংলা নাট্যকোষ সংগ্রহ, সংকলন,  প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে। তার প্রথম প্রকাশিত বই ‘সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক’৷

এছাড়া তার ‘চাকা’ নাটক থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় ১৯৯৪সালে এবং ‘কীত্তনখোলা’ নাটক থেকে চলচ্চিত্র বানানো হয় ২০০০ সালে৷ তিনি ‘একাত্তরের যীশু’ নামের চলচ্চিত্রের সংলাপ রচনা করেন ১৯৯৪ সালে৷

তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নান্দিকার পুরস্কার (আকাদেমি মঞ্চ কলকাতা), শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পান।

কালের ভাস্কর সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মারা যান।  তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার কাজের মাধ্যমে।

শুভ জন্মদিন সেলিম আল দীন।