ডা. এম আর খানের কথা বলছি। তিনি শিশুদের অনেকেরই খুব চেনা। ছোটবেলায় আমারও চিকিৎসা করেছেন তিনি। দেশের এই প্রথম শিশুচিকিৎসক ও শিশুবন্ধুকে সবাই বলেন- ‘গ্র্যান্ড টিচার’। ১৯২৮ সালের ১ অগস্ট সাতক্ষীরার রসূলপুর গ্রামে জন্ম নেন তিনি।
শনিবার তার ৮৭তম জন্মদিন। এমআর খানের পুরো নাম মো. রফি খান। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে তিনি খোকা নামে পরিচিত।
তার বাবা আব্দুল বারী খান ছিলেন সেই সময়কার এন্ট্রান্স পাস ও একজন নিবেদিত প্রাণ সমাজসেবক। মায়ের নাম জায়েরা খানম। তাদের চার ছেলের মধ্যে খোকা ছিলেন মেজ।
মাত্র চার বছর বয়সেই এমআর খান তার মায়ের কাছে তাল পাতায় প্রথম বর্ণ পরিচয় শিখেন।এরপর ভর্তি হন রসুলপুর প্রাইমারী স্কুলে। দশ বছর বয়সে সাতক্ষীরা সদরের প্রাণনাথ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় (পিএন স্কুল)-এ ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৩ সালে ওই স্কুল থেকেই সাথে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
পরে তিনি কলকাতায় চলে যান। ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। এ কলেজে পড়ার সময় ড. কুদরত-ই-খুদা ছিলেন তাঁর শিক্ষক।
১৯৪৫ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন তিনি। সেখানে তিনি চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন। দূরদূরান্ত থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা তখন গরুর গাড়িতে চড়ে এমআর খানের চেম্বারে আসত।
যারা আসতে পারত না তাদের দুর্দশা দূর করতে এমআর খান নিজেই সাইকেল চালিয়ে রোগীদের কাছে যেতেন।
১৯৫৬ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বৃটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনে ভর্তি হন। সেখান থেকে একই সালে ডিটিএমএন্ডএইচ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস এবং ১৯৭৮ সালে এডিনবার্গ থেকে এফআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। বৃটেনে এমআরসিপি পাস করার পর সিক চিলড্রেন হাসপাতালের প্রধান ডা. ডিকশন এম আর খানকে সেখানে বড় সুযোগ দিতে চাইলেও নাড়ির টানে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৬৩ সালে ডা. এমআর খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসোসিয়েট প্রফেসর অব মেডিসিন পদে যোগ দেন এবং একবছর পরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (শিশুস্বাস্থ্য) পদে নিয়োগ পান। পরে তিনি চলে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে। ১৯৭০ সালে তিনি অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পান।
১৯৮৮ সালে অধ্যাপক ডা. এম আর খান তাঁর সুদীর্ঘ চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে তাঁকে সরকার জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত করে এবং ২০০৯ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
এমআর খান শিশুদের প্রয়োজনে হাসপাতাল গড়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। দেশের খ্যাতনামা বহু শিশুবিশেষজ্ঞ তাঁর ছাত্র।
জন্মদিনে এই মহৎপ্রাণ শিশুবন্ধুর প্রতি রইল শুভেচ্ছা।