ছোটবেলা থেকেই আমার খুব গর্ব হয় যে আমি একজন মেয়ে। আমার কখনও মনে হয়নি, ‘আহ! আমি যদি ছেলে হতাম।’
ছেলে বা মেয়ে নয় মানুষ হওয়াই ছিল আমার লক্ষ্য।
কিন্তু আমাদের এই সমাজ যেন আমাকে মানুষের বদলে মেয়ে বলতেই বেশি আরাম বোধ করে। মেয়ের আগে যে আমি মানুষ এটা তারা মানতে নারাজ। এতে অবশ্য আমার কিছুই যায় আসে না।
আমরা দুই বোন। আমি আর আমার ছোট বোন আদিবা। আমাদের বাসায় প্রায় সারা বছরই মেহমান থাকেন। এদের মধ্যে অনেকেই আমার অচেনা। আমাদের বাসায় আসার পর তারা সবার আগে মাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনার কয় ছেলে-মেয়ে?’’ এরপর উত্তরে মা যখন তাদের জানায় যে আমরা দুই বোন, তখন তাদের মুখে যেন কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে। তাদের দেখে মনে হয় যেন, মেয়েরার অশান্তির প্রতীক।
আমাদের বাসার গলিতে একজন হুজুর থাকেন। এলাকার সবাই তাকে এক নামে চেনেন। কয়েকদিন আগের কথা। মা জরুরি কোনো কারণে বাইরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ হুজুর মাকে ডাক দিলেন। বললেন, ‘‘মা, আরেকটা সন্তান নিয়ে নাও। মেয়েরা বড় হলে, মেয়ের জামাইরা তোমাকে আর কয়দিন খাওয়াবে?’’
মা বললেন, “আমি আমার সন্তানদেরকে কখনো একজন ছেলে বা মেয়ে হিসেবে দেখি না। বাইরের একজন মানুষ হয়ে আপনি আমাকে এ ধরনের কথা কীভাবে বলতে পারেন?”
মা বাসায় এসে পুরো ঘটনাটা আমাকে বললেন। মার কথা শুনে আমার মনে নানা ধরনের প্রশ্ন জাগতে শুরু করল। আমি নিজেকে নিজে একটাই প্রশ্ন করলাম, “একজন মানুষকে যদি আরেকজন মানুষ হিসেবে ভাবতেই না পারে, তাহলে সে কী মানুষ?”
আমাদের সমাজে মানুষের মাথায় একটা বিষয় খুব ভালো ভাবে গেঁথে গেছে যে, মেয়েরা সবসময়ই দূর্বল। আজ এরকম ঘটনা আমার সাথে ঘটছে। কাল আমার মতোই আরকটি মেয়ের সাথে ঘটবে। কিন্তু কাজের মাধ্যমেই আমাদের প্রমাণ করতে হবে, ‘আমরাও মানুষ, অন্য প্রজাতি নই।’