দুজন মানুষকে আমার জীবনের আদর্শ বলে মনে করি। তারা হলেন আমার মা ও বাবা।
আমি সবসময় এ কথা বিশ্বাস করি যে, পরিবারের বা বাইরের মানুষেরও কিছু প্রত্যাশা আছে আমার ব্যাপারে কিন্তু মা-বাবাই কখনই আমার কাছে কিছু চান না। তাদের একমাত্র চাওয়া, আমার সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার পথটি যেন সহজ হয়।
আগে আমি মায়ের থেকে বাবাকে বেশি পছন্দ করতাম। কারণ মা শাসন করতেন। কিন্তু বড় হতে হতে বুঝতে পারি, মা কেন কোন কথা বলতেন। তার শাসন বারণ, আমার বড় হয়ে উঠতে কত জরুরি ছিল।
মা আমার চোখের দিকে তাকালেই বলতে পারেন আমি তাকে কী বলতে চাইছি। এমনকি আমি মার কাছ থেকে কোনো কথা লুকোতে চাইলেও পারতাম না, এখনও পারি না। মা কীভাবে যেন আমার না বলা কথা বুঝে ফেলেন। অন্যদিকে বাবা বকাঝকা করতেন না। তবে বাবাকে আমার বুঝতে খুব কষ্ট হতো, এখনও হয়। বাবা কোনো কথা বুঝলেও, না শোনার ভান করেন।
এরপর মা-বাবার সাথে বলতে শুরু করলাম আমার জীবনের সব কথা। যখন থেকে সব ধরনের কথা তাদের বলতে শুরু করি, তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি জীবনের কোনো সমস্যায় আটকে যাইনি। বরং আমি বিপদে পড়লে মা-বাবা আমাকে সাহায্য করেছেন।
বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনি, ওদের মা-বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে, মা-বাবা সারাদিন বকাঝকা করেন। মা-বাবাকে ভালো লাগে না ইত্যাদি। ওরা জানে মা-বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। এতে ওরা একটু অবাক হয়।মা-বাবাও যে বন্ধু হতে পারেন এটা ওদের কাছে অবিশ্বাস্য।
আমি ওদের বোঝালাম, মা-বাবার সাথে হয়তো তোরা সব কথা বলিস না। কিন্তু প্রায় প্রত্যেকের বাবা-মাই সন্তানের সমস্যা বোঝেন। কিন্তু সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণে অনেকেই মনে করেন, সন্তানের সাথে শুধু শাসনের সম্পর্ক। তবে সময় পাল্টাচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। মা-বাবাকে শত্রু নয়, বন্ধু মনে করেই তাদের সাথে সব কথা বলাই এর সমাধান ডেকে আনবে।
মা-বাবার সাথে বন্ধুতার সম্পর্কটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এটা গড়ে তোলার পেছনে মা-বাবার যেমন চেষ্টা ছিল, তেমনি ছিল আমারও।
আমরা বেশিরভাগ সমস্যায় পড়ি, সমস্যার কথাটা কাউকে বলতে না পেরে। সমাধান খুঁজে না পেয়ে। তখন অস্থিরতা বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে পড়াশোনাসহ অন্য কাজেও। তখন কুসংসর্গে বা ভুল পথে হাঁটার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু ঘরেই বন্ধু থাকে যদি আর তারা যদি হন মা বা বাবা অথবা দুজনেই, তাহলে জীবন হয়ে ওঠে সহজ আর সুন্দর।