মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকাটির নকশা করেছিলেন শিবনারায়ন দাস। তখন পতাকার লাল বৃত্তের মধ্যে দেশের মানচিত্র ছিল। পরে এর উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নির্ধারণ করা হয়।

১৯৭২ সালে  শিবনারায়ণ দাসের পতাকাটিকে সহজ করতেই মানচিত্রটি বাদ দেওয়া হয়। এভাবে পতাকার মাপ ও রঙের অনুপাত নির্ধারণ করে জাতীয় পতাকার একটি পরিমার্জিত রূপ দেন পটুয়া কামরুল হাসান। সেই পরিমার্জিত পতাকাই আমরা ব্যবহার করছি।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আব্দুর রব। তার একুশ দিন পর শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।   

মানব সভ্যতার গোড়া থেকেই পতাকার প্রচলন ছিল। তবে তখন জাতীয় পতাকার ব্যবহার হতো শুধুই যুদ্ধের ময়দানে। সৈন্যদের এক একটি বাহিনীকে এক জায়গায় জমায়েত করার উদ্দেশ্যে, তাদের জন্য স্থান নির্ধারণ ও নিজেদের দলকে চেনার লক্ষ্যে  লাঠির মাথায় এক খণ্ড রঙিন কাপড় বেঁধে সেটাকে পুঁতে রাখা হতো। আর ওই পতাকা দেখেই সৈন্যরা নিজ নিজ দলে একত্রিত হতো।

পতাকা বা ঝাণ্ডার ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় পারিসক এবং আসিরীয় সৈন্যদের মধ্যে। ধীরে ধীরে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও পতাকার ব্যবহার চালু হতে থাকে।

আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন রংয়ের কাপড় দিয়ে পতাকা তৈরির প্রচলন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যে। তারা বর্শার আগাতেও আয়তাকৃতির পতাকা ব্যবহার করতেন। আর এটাই আধুনিক পতাকার আদি ভিত্তি বলে মনে করা হয়। তবে তখন বিভিন্ন দেশে পতাকা ব্যবহার করা হলেও, এর তেমন কোন আনুষ্ঠানিক মর্যাদা ছিল না।  

১২১৮ সালে ডেনমার্কে, ১৩৩৯ সালে সুইজারল্যান্ডে পতাকা ‘জাতীয় প্রতীক’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৭৭ সালে ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। ফ্রান্সে জাতীয় পতাকার আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে ফরাসী বিপ্লবের পর অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে। ১৮০৫ সালে ইতালিতে জাতীয় পতাকা তৈরি হয়। তারপর ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ইউরোপসহ অন্য দেশগুলোতে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে জাতীয় পতাকা হয়ে ওঠে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতির প্রতীক এবং সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।