ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে রিকশা চালক রাজুর দেখা পেলাম। ও আমার বয়সীই হবে। বার বা তের বছর। কথা বলে জানলাম কয়েকমাস আগে ওর বাবার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আর তাই চিকিৎসার টাকা জোগাতে এই শিশুটি ঢাকায় এসেছে রিকশা চালাতে।

গ্রামের চেয়ে এখানে আয় বেশি হবে, সেই আশায় ও ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে।  রাজুর বাবার নাম সাইদুল। মার নাম হালিমা। বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগরের হেমরাজপুর গ্রামে। কিন্তু গত একমাস ধরে ঢাকার আদাবর বস্তিতে গ্রামের পরিচিত এক ভাইয়ের কাছে আছে ও।

আট বছর বয়সী ছোট একটি বোন আছে ওর। নাম পারভীন। অভাবের কারণে রাজু লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোট বয়স থেকেই সে বাবার সঙ্গে মালিকের গরু চরাত। তারপর এক সময় তাকে ভ্যান চালান শিখিয়ে দেয় তার বাবা। আজ সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগছে তার।   

বাবার খুব আদরের ছেলে রাজু। ও বলে, “বাবা খুব আদর করত। হাট থাকি বিস্কুট, খেলনা কিনে দেত।  

“এখন বাবার ওষুধ লাগে চারশ ট্যাহার মতো। রিকশা চালায়া দুশ থেকে আড়াইশ ট্যাহা পাই। মহাজনকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে যা থাকে বাড়িত পাঠায়া দেই।”

কম বয়স দেখে অনেক যাত্রী একটু বেশি করে ভাড়া দেন বলে জানায় রাজু। বিকাশ করে প্রতিদিনের আয় গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। আর এভাবেই সন্তানের রোজগারের ওপর ভরসা করে কোন রকমে চলছে বাবার চিকিৎসার খানিকটা খরচ।

রাজুর বয়সী শিশুরা যখন এই শহরেই স্কুলে যাচ্ছে তখন রাজু ব্যস্ত নিজের বাবাকে বাঁচানোর সংগ্রামে। সে জানায়, ওদের মতো তারও স্কুলে যেতে, ঘুরে বেড়াতে, খেলতে ইচ্ছে করে কিন্তু তাহলে তো বাবা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।  

রাজু তার বাবাকে বাঁচিয়ে তুলতে চায়। ও জানে না বাবা বেঁচে উঠবে কিনা, কিন্তু ও চেষ্টা করে যাবে।