নতুন শ্রেণিতে উঠে লেখাপড়ার চাপ না থাকায় বেড়াতে বেরিয়ে পড়লাম খাগড়াছড়ি। উদ্দেশ্যে, সাজেক পাহাড়।

ইট কাঠের শহর ঢাকায় থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠলে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে চলে যেতে বলব আমি। খাগড়ছড়িতে গিয়ে আমার এরকম অনুভূতিই হয়েছে।  

সেখানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেলে উঠলাম আমরা। পরের দিন সকালে চান্দের গাড়িতে করে বেড়িয়ে সাজেকের কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে। এটি লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! মনে হয়, পাহাড়টি যদি আমাদের দেশের ভেতর থাকত কী মজাই না হতো!    

কংলাক পাড়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের নাম সাজেক। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দূরে এই পাহাড়। হোটেল থেকে সেখানে পৌঁছতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। আমরা সাজেকের এক কটেজে গিয়ে উঠি।

image20

কটেজটা ছিল পুরোপুরি কাঠের তৈরি আর অতিথিদের খাবারের ব্যাপারটি পরিচালনা করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা। ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন রুচির খাবার। মজা পেলাম।

বিকেলে সাজেক পাহাড়ে উঠব বলে বেড়িয়ে পড়ি। পাহাড়ে ওঠার সময় বাঁশের দরকার হয়। সেটাতে ভর দিয়েই পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়।  

আঞ্চলিক শিশুরা পর্যটকের কাছে এই বাঁশ বিক্রি করে। ওদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে কিনে পাহাড়ে উঠা শুরু করি। পাহাড়ে উঠতে আধঘণ্টা সময় লাগল।

ওপরে উঠে অবাক হয়ে গেলাম। পাহাড়ের অত উঁচুতে বসতি থাকতে পারে ভাবিনি। পাহাড়ের উপরে হেলিপ্যাডও দেখলাম।

এখানে রয়েছে বড় বড় কালো পাথর। পাথরে খোদাই করা রয়েছে লেখা। স্থানীয়দের ধারণা, এটি ব্রিটিশ ধর্ম যাজকদের সমাধি।

বেড়াতে বেড়াতে রাত হয়ে গেল। রাতে পাহাড় থেকে নামাটা খুবই কষ্টের। নিচে নামতে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম ।  

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে কটেজের বারান্দায় দাঁড়াতেই কুয়াশার সেই কী অসাধারণ দৃশ্য! মনে হচ্ছিল যেন কেউ পাহাড়ের শরীর মুড়ে দিয়েছে সাদা চাদরে। দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না।

কটেজের মালিক আমাদেরকে জানালেন, বর্ষার সময় মেঘগুলো অনেক নিচে নেমে আসে। আর হাত দিয়ে মেঘ ছোঁয়া যায়। তখনই মনে মনে ভেবে রাখলাম মেঘকে হাত দয়ে ছুঁয়ে দেখতে বর্ষায় অন্তত একবার আসতেই হবে।