আজ যে মানুষটির কথা বলতে বসেছি, তার নাম ওয়াহিদুল হক। তিনি দেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ আর আমার কাছে ওয়াহিদ দাদু। শিশুদের কথা ভাবতেন, ভালোবাসতেন। শিশুদের মনের কথা বুঝতেন, গুরুত্ব দিতেন তিনি। ২৭ জানুয়ারি তার প্রয়াণ দিবস।

ওয়াহিদুল হক বাঙালি হয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য আজীবন মানুষ গড়েছেন, পথ দেখিয়েছেন। সারা দেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদান স্মরণীয়। আর তাই বারবার আমার মনে পড়ে তার কথা।

পরে তার সম্পর্কে জেনেছি, সেই আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন আমলে রবীন্দ্রনাথ যখন পাকিস্তানে নিষিদ্ধ সে সময় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আয়োজন তিনি ছিলেন অন্যতম কর্মী। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষের আয়োজনের মধ্যেই সংগীত বিদ্যালয় ‘ছায়ানট’-এর বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণিত করতেন তাঁর সংগঠিত ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র শিল্পীদের গান শুনিয়ে। গানের অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত অর্থ পাঠাতেন শরণার্থী শিবিরে।

এত বড় একজন মানুষকে আমি চিনতাম, তার কাছাকাছি থেকে বেড়ে উঠেছি তারই হাতে গড়া নালন্দা স্কুলে, ব্যাপারটি আমাকে গর্বিত করে।   

আমার বয়স সবে তিন বছর। বাবা আমাকে ওই স্কুলেই ভর্তি করিয়ে দেন। তখন নালন্দা স্কুলটি ছিল ধানমণ্ডির গ্রিনরোডে।

গাদাখানেক বই হাতে হাসিখুশি একজন মানুষকে দেখলাম। পরে জেনেছিলাম, উনিই ওয়াহিদুল হক। নালন্দার সবাই তাকে ‘ওয়াহিদ দাদু’ বলে ডাকে।

আমিও ‘ওয়াহিদ দাদু’ ডাকতে শুরু করি।

দাদু যখন কোন বিষয়ে কথা বলতেন, খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতাম।

আমি এখনো খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি একদিনের কথা মনে পড়লে। সেদিন ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দাদুর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম আমি। এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলির অন্যতম।

ওয়াহিদ দাদু ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকাল ৫ টায় চলে গেলেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। রেখে গেলেন, আমার মতো অসংখ্য মানুষ, যারা তাকে ভুলতে পারে না।