রবীন্দ্র সংগীত শুনলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। শুধু রবীন্দ্র সংগীত না যেকোনো বাংলা গানেই আমার মন ভালো হয়। নজরুল গীতি, লালন গীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি আরও কত গান।

এই গানগুলোর সঙ্গে আমার প্রাণের টান খুঁজে পাই। কোথায় যেন একটা আন্তরিকতা।

কিন্তু আমার অনেক বন্ধু বান্ধব আছে যারা এসব গান শোনে না। তারা এই গানগুলো পছন্দই করে না। অনেককেই বলতে শুনেছি এসব গান শুনলে নাকি তাদের ঘুম পায়। কষ্ট হয় এসব কথা শুনে। অনেকের দুঃসাহস দেখে অবাক হই। তারা বলে বাংলা গানে নাকি ঠিক ‘জমে না’।

বাংলার কৃষক মাঠে কাজ করতে করতে গান জুড়ে দেয়। মাঝিরা গলা ছেড়ে গায় ভাটিয়ালি গান। শেকড়ের সঙ্গে যার সম্পর্ক যে গানের তা নাকি ওদের ভালো লাগে না।

বিয়ে বাড়ি, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, বনভোজন সব জায়গাতেই বাজানো হয় হিন্দি গান। এসব অনুষ্ঠানে জায়গা পায় না ভাটিয়ালি, লালন। হাতে গোনা দুই একটি গানের অনুষ্ঠান ছাড়া এসব এখন আর তেমন গাওয়া হয় না।

এরচেয়ে আসক্তি বেড়েছে ইংরেজি ও হিন্দি গানের প্রতি। স্কুলে যেতে যেতে দেখি অনেক মানুষ কানে হেড ফোন গুঁজে গাড়িতে বসে আছে। আমি হলফ করে বলতে পারি এদের বেশির ভাগই হিন্দি কিংবা ইংরেজি গান শোনে।

আমার অনেক বন্ধু আছে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি কী গান তা জানে না কিন্তু হিন্দি, ইংরেজি গানের সুরকার, গীতিকারের নামও তাদের মুখস্ত।

কয়েক দিন আগের কথা। আমি জাতীয় জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক শিল্পী ছিলেন। শুরুর দিকে অনেক শ্রোতাও ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হল রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে। কিছুক্ষণ যেতেই আমার পেছনের বেশির ভাগ সিটগুলো ফাঁকা হয়ে গেল।  

এতে রবি ঠাকুর, লালন কিংবা নজরুলের সম্মান হানি হয় না। তারা তো মহা সমুদ্র, আসমানের মতো। কিন্তু কষ্ট হয় আমার এই অভাগা জাতিকে নিয়ে। এরা নিজের শেকড়কে চিনতে পারে না।

মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে এরা কী এই গানগুলো বোঝে না? নিজের দেশ ও সংস্কৃতি মানুষের একটা অংশ। যারা নিজের সংস্কৃতি চেনে না তারা জানি না কেমন মানুষ।