মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে অসংখ্য বাঙালি। তবে দেশের স্বাধীনতার জন্য ৭১ এর আগেই প্রাণ দিয়েছেন এক বীর। তার নাম আসাদুজ্জামান।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রনেতা। এরপর থেকে দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আসাদের মৃত্যের পর সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে একটি জনপ্রিয় স্লোগান। সেটা হল ‘আসাদ ভাইয়ের মন্ত্র, জনগণতন্ত্র’।

তিনি শহীদ হওয়ার পর তিন দিনের শোক পালন করা করা হয়। শোক শেষে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সবশ্রেণির মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে।  ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠে। সংঘটিত হয় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ুব খানের।

পাকিস্তানি দখলদারিত্ব থেকে জাতিকে মুক্ত করা এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল আসাদের স্বপ্ন। গণঅভ্যুত্থানের জাগরণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলকে এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করে।

এর হাত ধরেই আসে মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালিরা পায় স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। মানচিত্রে জায়গা পায় বাংলাদেশ।

শহীদ আসাদ ১৯৪৯ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাইয়ের নাম ইঞ্জিনিয়ার রশিদুজ্জামান। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের।

শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত।

তিনি শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি বি এ ও এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আসাদ গরীব ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার বিষয়ে সব সময় সজাগ ছিলেন। তিনি শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় নামে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।