আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করে। সবাই যার যার ধর্ম, আচার পালন করে থাকে।

আমাদের দেশের পাহাড় এমনকি অনেক সমতল অঞ্চলে বসবাস করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।

খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, দিনাজপুর, রংপুরে এদের বসবাস।

তাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে নানা ধরনের উ্ৎসব। দলগত নাচ, গান ও নানা আচারের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় উৎসব।

নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ বাঙালিরা মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা ও নানা আচারে পালন করলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই উৎসব পালনে ভিন্নতা দেখা যায়।

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন বৈসাবি উৎসব করে থাকে। এটি মূলত পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব।

চাকমারা এই উৎসবকে বলে বিজু্, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই ও অহমিয়ারা বিহু বলে।

ত্রিপুরার বৈসুক থেকে‘বৈ’, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে ‘সা’ ও চাকমাদের বিজু থেকে ‘বি’ মিলে হয় বৈসাবি।

ত্রিপুরাদের লোকজ উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রধান উৎসব হলো ‘বুইসুক বা বৈসুক।’

চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং নবসর্ষের প্রথম দিন তারা এই উৎসবটি পালন করে।

তারা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে বলে ‘বিসিকাতাল।’ উৎসবের প্রথম দিন ছেলেমেয়েরা গাছ থেকে ফুল তোলে, ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও পরিস্কার কাপড় পড়ে।

তারপর ঝুড়িতে ধান নিয়ে মোরগ মুরগিকে খেতে দেয়। এছাড়াও ওই দিন তারা পরিস্কার কাপড় পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এই সময় নানা রকমের পিঠা ও পানীয় পান করানো হয় তাদের।

‘বৈসুক’ উৎসব শুরু হলে ‘গরাইয়া’ নৃত্যের দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচ পরিবেশন করে।

এই উৎসবটি মারমারা তিন দিন ব্যাপী উদযাপন করে থাকে। সাইংগ্রাইং এর প্রথম দিনটিকে তারা বলে ‘পাইং ছোয়াইক।’ এর অর্থ হল ‘ফুল তোলা ।’ এই ‍দিন মারমা যুবতীরা গোলাপ, জবা, গন্ধরাজ ইত্যাদি নানা ধরনের ফুল সংগ্রহ করে। এর দ্বিতীয় দিনকে তারা বলে ‘সাংগ্রাইং রাইকু।’ এ দিনটি দেবীর আগমন দিবস। তাই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মারমারা নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। ঘরে ঘরে চলে প্রবীণ পূজা। তৃতীয় দিনটিকে বলা হয় ‘সাংগ্রাইন আপ্যায়ন।’এই দিনটি হল দেবীর চলে যাওয়ার দিন। এই দিন পিন্ডদান, পবিত্র গ্রন্থ পাঠ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে দিবসের সমাপ্তি ঘটে।

এছাড়াও মারমারা ‘জলকেলি’ নামের একটি অনুষ্ঠান পালন করে। এই অনুষ্ঠানে উৎসবে প্রতিটি যুবক পছন্দ অনুযায়ী এক একজন যুবতীকে লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট স্থান থেকে জল নিয়ে ছুঁড়ে মারে। যুবক যুবতীর মধ্যে সামাজিক ঐক্য, সম্প্রতী, প্রেম, ভালোবাসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে এই উৎসব পালন করা হয় ।

মারমাদের মতো চাকমারা তিনদিন ব্যাপী পালন করে ‘বিজু’ উৎসব।

প্রথম দিন ভোরে উঠে তারা ফুল তুলতে যায়। এরপর তারা গৃহ দেবতার পূজা করে। এরকম সময়ে ঘর–বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। দ্বিতীয় দিন তারা ভোরে উঠে নদীতে বা জলাশয়ে স্নান করে। এরপর দলে  দলে নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। তৃতীয়দিন তারা উপসানালয়ে গিয়ে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।