বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাসের মতোই আর এক দুর্যোগ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত।

বর্তমানে পৃথিবীতে পাঁচশ’ ৫০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। এর মধ্যে অন্যতম মাউন্ট এটিনা, মাউন্ট মেরাপি, মাউন্ট ভিসুভিয়াস, পোপোকেটাপেল ইত্যাদি।

পৃথিবীর অন্যতম আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ভিসুভিয়াস। ইতালির নেপলস উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরি এটি। নেপলস থেকে নয় কিলোমিটার পূর্বদিকে সমুদ্রোপকূলের খুর কাছেই এটি।

খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দের অগ্ন্যুৎপাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধব্বংস হয়ে যায়। অনেক পরে ১৮শ’ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিসুভিয়াসের একটি ঐতিহাসিক এবং সাহিত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে। পম্পেই শহরে টিকে যাওয়া অনেক গৃহমন্দিরের ভেতর ভিসুভিয়াস নামটি সাপ হিসেবে খোদাইকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ক্যাপুরা থেকে পাওয়া একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, এটিকে আগে একটি শক্তি হিসেবে উপাসনা করা হতো।

ভিসুভিয়াসের সব শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ১৯৪৪ সালে। এতে ইতালিতে মারা গিয়েছিলেন ২৭জন ও গৃহহীন হয়েছিল অনেক মানুষ।

আগ্নেয়গিরি হলো এমন এক রকম পাহাড় যার ভেতর থেকে মাটির গভীরে থাকা উত্তপ্ত ও গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস বেরিয়ে আসতে পারে। আর বেরিয়ে আসা এই সব জিনিস ঠাণ্ডা হয়ে পাহাড় তৈরি করে। এটাই আগ্নেয়গিরি। আর সেই গরম আর গলিত পদার্থের নির্গমনকে বলে অগ্ন্যুৎপাত আর পদার্থগুলিকে লাভা।   

যে সব এলাকায় আগ্নেয়গিরি রয়েছে সেখানে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সব জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে নিমেষেই।

জার্মানির প্রধান বেতার ডয়েচে ভেলের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অগ্ন্যুৎপাত ঘটার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন জার্মানির পটসডামে অবস্থিত জিওসায়েন্সেস গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা৷  

ভূপদার্থবিদ বিয়র্গার গটফ্রিড ল্যুয়র পৃথিবীর ১৫০০ সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং কম্পন সম্পর্কিত কার্যকলাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন৷ তিনি বলেন, ‘একটি আগ্নেয়গিরি কয়েকশ’ বছর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে৷ এরপর হঠাৎ করে সক্রিয় হয়৷ তবে এই সক্রিয় হওয়ার কিছু পূর্ব লক্ষণ রয়েছে৷

‘উদাহরণস্বরূপ মাউন্ট সেন্ট হেলেনস বা পিনাটুবোর কথা বলা যেতে পারে৷ অগ্ন্যুৎপাত সম্পর্কে কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব৷ তবে কাজটি বেশ কঠিন,’ বলেন তিনি।

পটসডামের গবেষক রাল্ফ নাউমান এই বিষয়ে বলেন, ‘অগ্ন্যুৎপাতের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তরল পদার্থ এবং পানি৷ আর এই তরল এবং পানিই অগ্ন্যুৎপাতকে বিস্ফোরণে পরিণত করে৷”

তবে অগ্ন্যুৎপাতের সব রহস্য কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি৷ বিশেষ করে বিজ্ঞানীরা ঠিক কবে নাগাদ অগ্ন্যুৎপাত সম্পর্কে একেবারে সঠিক তথ্য জানাতে পারবেন এবং আগেভাগেই সে সবের ক্ষতির মাত্রা নিরূপণে সক্ষম হবেন, সেটা কেউ জানে না৷