পৃথিবীর ক্রমবর্ধমাণ জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা কমাতে পোকামাকড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কিছু বিজ্ঞানি।

একটি ফড়িং খেতে কি কুড়কুড়ে শব্দ হয়? ধর তুমি যদি মেক্সিকো, থাইল্যান্ড ও কেনিয়ার মতো দেশে থাকতে, তবে পোকামাকড় মুখে নিয়ে কামড়ানোর ধারণা তোমার কাছে অদ্ভুত মনে হতো না।

হাজার বছর আগে থেকেই পোকামাকড় খাওয়া পৃথিবীর অনেক দেশেই খুবই সাধারণ একটি ঘটনা।

টাইম ফর কিড্‌সের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যারা পোকা খায় তাদের কাছে ছারপোকা খুবই সুস্বাদু ও প্রিয়। উইপোকা রান্না করে খাওয়ার সময় তারা বলে, “আহা এটা খুবই সুস্বাদু।”

নেদারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্নল্ড ভ্যান হোম টিএফকে এ কথাগুলো জানান। ভ্যান হোম একজন পতঙ্গবিজ্ঞানী। তিনি ছারপোকা খেতেও পারদর্শী। নানা দেশ ঘুরে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন, কীভাবে নানা শ্রেণির মানুষ পতঙ্গ সংগ্রহ করে এবং তা খাদ্য হিসেবে খায়।

কেনিয়ায় গিয়ে তিনি উইপোকা খেতে চেষ্টা করেন। থাইল্যান্ডে যখন তিনি যান তখন সেটি ছিল সেখানকার পোকামাকড়ের ঋতু।

ছারপোকা খেতে যারা পছন্দ করে তারা বলেন, “এটা শুধু সুস্বাদুই নয় বরং পুষ্টিকরও বটে।”

এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ভ্যান হোম যেসব বিজ্ঞানিদের সাথে কাজ করতেন তাদেরকেও তিনি পতঙ্গ খেতে উৎসাহিত করেন। যেখানে এটি ছিল সাধারণ একটি ঘটনা মাত্র।

পতঙ্গ ভবিষ্যৎ সময়ের মাংস:

জাতিসংঘের তথ্যমতে, পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা সাত বিলিয়নের মতো। ২০৫০ এর মধ্যেই এটি নয় বিলিয়ন হয়ে যাবে। সে সময় মাংসের চাহিদা হবে দ্বিগুণ। ফলে পশুপালনের জন্য বিশাল এলাকার প্রয়োজন হবে এবং পশুখাদ্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এ কারণে মাংসের চাহিদা পুরণে আমাদের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।

ভ্যান হোম বলেন,” এরজন্য খুবই ভালো পথ হতে পারে পতঙ্গ খাওয়া।”

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পোকামাকড় পালনে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে না, অনেক জনবহুল স্থানেই তারা বেঁচে থাকতে পারে। খাদ্য হিসেবে ছারপোকা খুব সস্তা হবে কেননা তারা খায় আলুর খোসার মতো এটো খাবার, যার এক তৃতীয়াংশই আমরা ফেলে দিই। এগুলোর মধ্যেই পতঙ্গ বড় হয়। শুধু তাই নয় পশুদের চেয়ে ছারপোকার খাদ্য ও পানীয় খরচও খুবই কম।

ব্রায়ান ফিসার নামে ক্যালিফোর্নিয়ার একাডেমি অব সায়েন্সের একজন পতঙ্গ বিজ্ঞানীর মতে, পতঙ্গ খুবই দক্ষ প্রাণি। নিজেকে উষ্ণ রাখতেই একটি গাভী তার শরীরের অধিকাংশ শক্তি ব্যয় করে। এর চেয়ে পতঙ্গরা বেশ চিন্তাশীল। তারা তাদের খাদ্যের অধিকাংশই তাদের শরীরের বৃদ্ধিতে ব্যয় করে।

কি পরিমাণ লোক পতঙ্গ খেতে পছন্দ করছে:

ফিসার বলেন, “প্রায় ১৭০০ প্রজাতির ছারেপোকা রয়েছে যা খাওয়া অত্যন্ত নিরাপদ।

“তবে বাড়ির পেছনের উঠোন থেকে সংগ্রহ করা ছারপোকা রান্নার বিশেষ পদ্ধতি না জানলে তা আপনার জন্য হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদি আপনার ছারপোকা খেতে ইচ্ছে হয় তবে আপনি মার্কিন রেস্টুরেন্টে গিয়ে তা অর্ডার করতে পারেন।”

নিউইয়র্ক সিটির টলাচি রেস্তোরার সেফ জুলিয়া মেদিনা মেক্সিকো থেকে ফড়িং সংগ্রহ করে তার সাথে স্টাফ টাকোস দিয়ে বিশেষ পদের একটি রান্না করেন। প্রতিদিন সে এই মেনুটির ১০ থেকে ১৫টির অর্ডার পায় বলে সে জানায়।

ভ্যান হোম অসাধারণ কিছু ছারপোকার রেসিপি তৈরির জন্য নেদারল্যান্ডে কিছু সেফদের সাথে কাজ করেন। পরীক্ষামূলকভাবে এই দলটি দুই ধরণের মিটবল তৈরি করে। কিছু মিটবলে তারা শুধুই সাধারণ মাংস এবং অন্যগুলোতে মাংস ও পতঙ্গ একসাথে মিলিয়ে তৈরি করে। দেখা গেছে প্রতি দশজনের মধ্যে নয়জনই মাংস-পতঙ্গের মিটবলগুলো বেশি পছন্দ করেছে।

ভবিষ্যৎ এ কি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মানুষের কাছে পোকা খাওয়া একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হবে? এমন প্রশ্নে ভ্যান হোম বলেন,” আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এমনটাই ঘটবে। এক ব্যাগ ছারপোকার প্রতি যে কেউই তখন যত্নশীল থাকবে।”