স্বাধীনতা দিবসের খুব ভোরে শেওড়াপাড়ার প্রধান সড়কের কাছে আসতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো আমার। হাজার হাজার মানুষ ছুটছে প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে। উদ্দেশ্য লাখো কণ্ঠ এক হয়ে সোনার বাংলা গাইবে।

আমাদের এ পাশটায় বেশিভাগই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। এদের কেউ কেউ আবার জাতীয় পতাকার সাথে মিলিয়ে লাল সবুজ জামা পরেছে। এতো মানুষের সমাবেশে আগে আমি কখনও যাইনি। তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে আমরাও ছুটতে থাকি।

সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে আমাদের উপস্থিতির কথা জানানোর কথা ছিল। সেখানে নালন্দা বিদ্যালয়ের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা জড়ো হই। এরপর ছায়ানট দলের সঙ্গে আমরা একসাথে প্যারেড গ্রাউন্ডের ভেতরে রওনা হই। ৮ নম্বর সেক্টরের এ-ব্লকে ছিলাম আমরা। সেখানে দাঁড়িয়েই আমরা জাতীয় সংগীত গাই।    

জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করতে আমরা একসাথে মিলেছি, এটা আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু তারচেয়ে বেশি যেটা ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে নানা শ্রেণির, পেশার, ধর্মের, বয়সের মানুষ সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়েছি। অন্যরকম একটা অনুভূতি মনকে নাড়া দিয়ে যায়।

নালন্দার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আমার বান্ধবী রুহামা আন নাবা বলে, “বিশ্ব রেকর্ড হোক বা না হোক, এতো মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইছি, এটাই অনেক বড় একটি ব্যাপার।”

ওই শ্রেণিরই মীর মাইশা তাবাস্সুম তুহু বলে,”সবাই মিলে যখন জাতীয় সংগীত গাইছি তখন যেন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল।

“এটা অনেক বড় একটা কাজ হয়েছে। জাতীয় সংগীত দেশের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়, সাম্যের শিক্ষা দেয়।”

তবে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবকদের হাঁটাহাঁটি খারাপ লেগেছে। তাদের তো উচিত ছিল জাতীয় সংগীতের সময় ওখানেই দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া।

ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা অনুভব করি দেশের জন্য চাইলে আমরা এক হতে পারি।

এক সাথে জাতীয় সংগীত গেয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিল এদেশের মানুষ এক হলে অনেককিছুই করতে পারে, যেমন তারা ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে করেছিল।