চির বিদায় নিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কাজী জাকির হাসান চন্দন।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে রোববার ভোর ৩টা ৫০ মিনিটে সরকারি বাড়িতে তিনি মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের শিলিগুড়ির মূর্তি ক্যাম্প থেকে ছয় সপ্তাহের ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধ করেছেন ছয় নম্বর সেক্টরের লালমনিরহাট সাব সেক্টরে। ফুলবাড়ির গোরপমণ্ডল এলাকায় অপারেশনের সময় পাকিস্তানি সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে এই যোদ্ধার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ উড়ে যায়।  

মৃত্যুর ঠিক আট দিন আগে ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখ শুক্রবারে তিনি ‘হ্যালো’র মুখোমুখি হয়েছিলেন। রাজধানীর উত্তর কাফরুল এলাকায় এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উত্তর কাফরুল হাইস্কুল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হ্যালোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফেলু মিয়া নামের এক শিশুমুক্তির আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা তুলে ধরেন সেদিন। মুক্তিযুদ্ধে শিশুরা আত্মত্যাগ করলেও ইতিহাসে তাদের অনেকেরইনাম লেখা হয়নি বলে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন।

ছোটদের উদ্দেশ্য করে সেদিন তিনি বলেছিলেন, “১৯৭১ এ তোমাদের পূর্ব পুরুষরাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, এই দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন। ফেলু মিয়ার মতো তোমরাও দেশকে ভালবেসো। মনে রেখ, মুক্তিযুদ্ধ কোনো গল্প নয়। মুক্তিযুদ্ধ ঘটনা, ইতিহাস। সে ইতিহাসে শিশুদেরও বীরত্ব ও গৌরবের কথা রয়েছে।”

তার এই কথা নিয়ে ‘অনেক শিশুমুক্তির কথা ইতিহাস লেখেনি‘ শিরোনামে একটি সংবাদ গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ হ্যালোতে প্রকাশিত হয়। তার পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে গণমাধ্যমে সেটিই ছিল এই যোদ্ধার শেষ সাক্ষাতকার।

কাজী জাকির হাসান চন্দনের বাবার নাম কাজী মকবুল হোসেন ও মায়ের নাম জুলেখা বেগম। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা গ্রামে। স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধা জাকির হাসান চিত্র নাট্যের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ বেতারে। ১৯৭২ সালে বেতারে তার প্রথম নাটক ‘খেয়াঘাটের মাঝি’ প্রচারিত হয়। ঢাকা বেতার নাট্যচর্চার ইতিকথা, বেতার নাটকের নিজস্ব আর্টিস্টদের জীবনী, সারাদেশের বেতার নাট্যশিল্পীদের জীবনী প্রভৃতিসহ তার ১৫টি গ্রন্থের মধ্যে পাঁচটি গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের মূখ্য পাণ্ডুলিপিকার হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।